أحمد محمد لبن Ahmad.M.Lbn مؤسس ومدير المنتدى
عدد المساهمات : 52644 العمر : 72
| موضوع: মুহররমওআশুরারফযীলত (Bengali) الجمعة 14 سبتمبر 2018, 6:38 am | |
| মুহররমওআশুরারফযীলত (Bengali)
فضل عاشوراء وشهر الله المحرم
<بنغالي>
মুহাম্মাদইবনসালেহআল-মুনাজ্জিদ
محمد بن صالح المنجد
অনুবাদক:ইকবালহোছাইনমাছুম
সম্পাদক:ড. আবুবকরমুহাম্মাদযাকারিয়া
ترجمة: إقبال حسين معصوم
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
মুহররমওআশুরারফযীলত
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على نبينا محمد خاتم الأنبياء وسيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين وبعد
মুহররম,একটি মহান বরকতময় মাস। হিজরী সনের প্রথম মাস। এটি ‘আশহুরে হুরুম’তথা হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ عِدَّةَ ٱلشُّهُورِ عِندَ ٱللَّهِ ٱثنَا عَشَرَ شَهرا فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِ يَومَ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلأَرضَ مِنهَآ أَربَعَةٌ حُرُم ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلقَيِّمُ فَلَا تَظلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُم﴾ [التوبة: ٣٦]
. “নিশ্চয়মাসসমূহেরগণনাআল্লাহরকাছেবারমাসআল্লাহরকিতাবে, (সেদিনথেকে)
যেদিনতিনিআসমানওযমীনসৃষ্টিকরেছেন।এরমধ্যথেকেচারটিসম্মানিত,
এটাইপ্রতিষ্ঠিতদীন।সুতরাংতোমরাএমাসসমূহেনিজদেরউপরকোনোজুলুমকরোনা। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত:৩৬]
আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
«السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ».
“বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি, তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি পর পর লাগোয়া জিলকদ, যিলহজ ও মুহররম আর (চতুর্থটি হলো) জুমাদাস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব”।
তন্মধ্যে মুহররমকে মুহররম বলে অভিহিত করা হয়েছে কারণ এটি অতি সম্মানিত।
আল্লাহর বাণী فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ“তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না।”অর্থাৎএই সম্মানিত মাসসমূহে তোমরা কোনো অন্যায় করো না। কারণ এ সময়ে সংঘটিত অন্যায় ও অপরাধের পাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ও মারাত্মক।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাفَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ“তোমরা এতে নিজেদের ওপর কোনো যুলুম করো না।”এর ব্যাখ্যায় বলেছেন,এ বারো মাসের কোনোটিতেই তোমরা অন্যায় অপরাধে জড়িত হয়ো না। অতঃপর তাহতে চারটি মাসকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করেছেন। সেগুলোকে মহা সম্মানে সম্মানিত করেছেন। এসবের মাঝে সংঘটিত অপরাধকে অতি মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য করেছেন। আর তাতে সম্পাদিত নেক আমলকে বেশি সাওয়াব যোগ্য নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন।
কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুفَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ“তোমরা এতে নিজেদের ওপর কোনো যুলুম করো না।”এর ব্যাখ্যায় বলেছেন,যদিও যুলুম সব সময়ের জন্য বড় অন্যায় তবে হারাম মাস চতুষ্টয়ে সম্পাদিত যুলুম অন্যান্য সময়ে সম্পাদিত যুলুম হতে অপরাধ ও পাপের দিক থেকে আরও বেশি মারাত্মক অন্যায়। আল্লাহ তা‘আলা নিজ ইচ্ছা মাফিক যাকে ইচ্ছা বড় করতে পারেন।
তিনি বলেন,মহান আল্লাহ নিজ সৃষ্টি হতে খাঁটি ও উৎকৃষ্টগুলোকে বাছাই করেছেন; ফিরিশতাকুল থেকে কতককে রাসূল হিসেবে বাছাই করেছেন অনুরূপ মানুষ থেকেও। কথা থেকে বাছাই করেছেন তাঁর যিকিরকে। আর জমিন থেকে বাছাই করেছেন মসজিদসমূহকে। মাসসমূহ থেকে বাছাই করেছেন রমযান ও সম্মানিত মাস চতুষ্টয়কে। দিনসমূহ থেকে বাছাই করেছেন জুমু‘আর দিনকে আর রাত্রসমূহ থেকে লাইলাতুল কদরকে। সুতরাং আল্লাহ যাদের সম্মানিত করেছেন তোমরা তাদের সম্মান প্রদর্শন কর। আর বুদ্ধিমান লোকদের মতেপ্রতিটি বস্তুকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয় মূলত সেসব জিনিসের মাধ্যমেই যেসব দ্বারা আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেছেন।
মুহররম মাসে অধিক পরিমাণে নফল সাওমের ফযীলত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ»
“রমযানের পর সর্বোত্তমসাওমহচ্ছে আল্লাহর মাস মুহররম (মাসের সাওম)”।
شَهْرُ اللَّهِবাক্যে شَهْر কে اللَّهِ-এর দিকে যেإضافةবা সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে এটি إضافة تعظيمঅর্থাৎসম্মানের সম্পর্ক। আল্লামা ক্বারী রহ. বলেন, হাদীসের বাহ্যিক শব্দমালা থেকে পূর্ণ মাসের সাওম বুঝে আসে। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ব্যতীত আর কোনো মাসে পূর্ণ মাসসাওম পালন করেননি, এটি প্রমাণিত। তাই হাদীসকে এ মাসে বেশি পরিমাণেসাওম পালন করার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে বলে ধরা হবে।
শাবান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকসাওম পালন করেছেন বলে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হতে পারে মুহররম মাসেরফযীলতসম্বন্ধে তাঁকে একেবারে জীবনের শেষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে আর তিনি তা বাস্তবায়ন করে যাবার সময় পাননি।
আল্লাহ তা‘আলা স্থান ও কাল যাকে ইচ্ছা মর্যাদা দিয়ে থাকেন
আল্লামা ইয্যইবন আব্দুস সালাম রহ. বলেন,স্থান ও কালের একের ওপর অপরের মর্যাদা দান দুই প্রকার:এক.
পার্থিব। দুই. দীনী, যা আল্লাহর দয়া ও করুণার ওপর নির্ভরশীল। তিনি সেসব স্থান বা কালে ইবাদত সম্পন্নকারীদের সাওয়াব বৃদ্ধি করে দিয়ে তাদের ওপর করুণা করেন। যেমন, অন্যান্য মাসের সাওমের তুলনায় রমযানের সাওমের মর্যাদা অনুরূপ আশুরার দিন..। এগুলোর মর্যাদা আল্লাহর দান ও ইহসানের ওপর নির্ভরশীল। ইতিহাসে আশুরা
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«قدم النبي صلى الله عليه وسلم المدينة فرأى اليهود تصوم يوم عاشوراء فقال: مَا هَذَا قَالُوا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ، هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوسَى، قال: فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইয়াহূদীরা আশুরার দিনসাওমপালন করছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবললেন,এটি কী?তারা বলল,এটি একটি ভালো দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মূসা আলাইহিস সালামসাওম পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ বললেন,মূসাআলাইহিস সালামকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনিসাওমরেখেছেন এবংসাওমরাখার নির্দেশ দিয়েছেন”।
বুখারীর বর্ণনা, هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ এটি একটি ভালো দিন।
মুসলিমের বর্ণনায় আছে,هذا يوم عظيم أنجى الله فيه موسى وقومه وغرّق فرعون وقومه“এটি একটি মহান দিন, আল্লাহ তা‘আলা তাতে মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কওমকে রক্ষা করেছেন আর ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন।”
বুখারির বর্ণনা,فصامه موسى “মূসা আলাইহিস সালাম সাওম পালন করেছেন।”
ইমাম মুসলিম তার বর্ণনায় সামান্য বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন, شكراً لله تعالى فنحن نصومه“(তিনি সাওম পালন করেছেন) আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায়স্বরূপ, তাই আমরাওসাওমপালন করি।”
বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে,ونحن نصومه تعظيماً له“আর আমরা সাওম পালন করি তার সম্মানার্থে।”
ইমাম আহমাদ সামান্য বর্ধিতাকারে বর্ণনা করেছেন,
«وهو اليوم الذي استوت فيه السفينة على الجودي فصامه نوح شكراً»
“এটি সেই দিন যাতে নূহ আলাইহিস সালাম-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নূহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে সেদিনসাওমরেখেছিলেন”।
বুখারীর বর্ণনাوأمر بصيامه“এবং সাওম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।”
বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে,فقال لأصحابه: أنتم أحق بموسى منهم فصوموا“তিনি তাঁর সাহাবীগণকে বললেন,মূসা আলাইহিস সালামকে অনুসরণের ক্ষেত্রে তোমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। সুতরাং তোমরা সাওম পালন কর।”
আশুরারসাওমপূর্ব হতেই প্রসিদ্ধ ছিল এমনকি রাসূলুল্লাহর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে জাহেলি যুগেও আরব সমাজে তার প্রচলন ছিল।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেন,
«إن أهل الجاهلية كانوا يصومونه..»
“জাহেলি যুগের লোকেরা আশুরাতেসাওমপালন করত।”..
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন,
কুরাইশরা আশুরারসাওমপ্রসঙ্গে সম্ভবত বিগত শরী‘আত যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর ওপর নির্ভর করত। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরাত করার পূর্বেই মক্কাতে আশুরারসাওমপালনকরতেন। হিজরতের পর দেখতে পেলেন মদিনার ইয়াহূদীরা এদিনকে উদযাপন করছে। তিনি কারণ সম্বন্ধে তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা উল্লিখিত উত্তর দিল। তখন নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে ঈদ-উৎসব উদযাপন প্রসঙ্গে ইয়াহূদীদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিলেন। যেমন, আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,তিনি বলেন,
“আশুরার দিনকে ইয়াহূদীরা ঈদ হিসেবে গ্রহণ করেছিল”।
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,كان يوم عاشوراء تعظمه اليهود تتخذه عيدا“আশুরার দিনকে ইয়াহূদীরা বড় করে দেখত (সম্মান করত),একে তারা ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল।”
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে, كان أهل خيبر ( اليهود ) يتخذونه عيدا، ويلبسون نساءهم فيه حليهم
وشارتهم“খায়বর অধিবাসীরা (ইয়াহূদীরা) ‘আশুরার দিনকে ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। তারা এদিন নিজ স্ত্রীদেরকে নিজস্ব অলঙ্কারাদি ও ব্যাজ পরিধান করাত।” তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বললেন,فَصُومُوهُ أَنْتُمْ“তাহলে তোমরাসাওমপালন কর”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে এদিনেসাওমপালন করার নির্দেশ দানের আপাত কারণ হচ্ছে,ইয়াহূদীদের বিরোধিতা করা। যেদিন তারা ঈদ উদযাপন করে ইফতার করবে সেদিন মুসলিমগণসাওমরাখবে। কারণ ঈদের দিনসাওমরাখা হয় না।
আশুরার সাওমেরফযীলত
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাথেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
«مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلّا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ»
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেসাওমরাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি, যত দেখেছি এ‘আশুরার দিন এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাসের সাওমের প্রতি”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صيام يوم عاشوراء، إني أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله»
“আশুরার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি,তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন”।
এটি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর অপার করুণা। তিনি একটি মাত্র দিনের সাওমর মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সত্যই মহান আল্লাহ পরম দাতা।
বছরের কোন দিনটি আশুরার দিন
আল্লামা নাওয়াবী রহ. বলেন,তাসু‘আ,আশুরা দু’টি মদ্দযুক্ত নাম। অভিধানের গ্রন্থাবলীতে এটিই প্রসিদ্ধ। আমাদের সাথীরা বলেছেন,আশুরা হচ্ছে মুহররম মাসের দশম দিন। আর তাসু‘আ সে মাসের নবম দিন। জমহুর ওলামারাও তা-ই বলেছেন। হাদীসের আপাতরূপ ও শব্দের প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক চাহিদাও তা-ই। ভাষাবিদদের নিকট এটিই প্রসিদ্ধ।
এটি একটি ইসলামী নাম, জাহেলি যুগে পরিচিত ছিল না।
ইবন কুদামাহ রহ. বলেন,‘আশুরা মুহররম মাসের দশম দিন। এটি সা‘ঈদ ইবনুল মুসায়্যিব ও হাসান বসরি রহ.-এর মত। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহুমা আনহুমা বর্ণনা করেন,
«أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم - بصوم يوم عاشوراء العاشر من المحرم ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরা-মুহররমের দশম দিনেসাওমরাখার নির্দেশ দিয়েছেন”। ‘আশুরার সাথে তাসু‘আর সাওমও মুস্তাহাব
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন,
«حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ". قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ».
“যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরারসাওমরাখলেন এবং (অন্যদেরকে)সাওমরাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে,সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,আগামী বছর এদিন আসলেআমরা নবম দিনওসাওমরাখব ইনশাআল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন,আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে”।
ইমাম শাফে‘ঈ ও তার সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার সাওমের ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের সাওম-ই মুস্তাহাব। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ তারিখসাওমরেখেছেন এবং নয় তারিখসাওমরাখার নিয়ত করেছেন।
এর-ই ওপর ভিত্তি করে বলা যায়,আশুরার সাওমের কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখেরসাওমরাখা। এরচে উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখেরসাওমপালন করা। এমনিভাবে মুহররম মাসে সাওমের সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফযীলতও ততই বাড়তে থাকবে।
তাসু‘আরসাওমমুস্তাহাব হবার হিকমত
ইমাম নাওয়াবী রহ. বলেন, তাসু‘আ তথা মুহররমের নয় তারিখসাওমমুস্তাহাব হবার হিকমত ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে প্রাজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন,
এক. এর উদ্দেশ্য হলো,ইয়াহূদীদের বিরোধিতা করা। কারণ তারা কেবল একটি অর্থাৎ দশ তারিখসাওমরাখত। দুই. আশুরার দিনে কেবলমাত্র একটিসাওমপালনের অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে তার সাথে অন্য একটি সাওমের মাধ্যমে সংযোগ সৃষ্টি করা। যেমনিকরে এককভাবে জুমু‘আর দিনসাওমরাখতে নিষেধ করা হয়েছে। এটি আল্লামা খাত্তাবী ও অন্যান্যদের মত।
তিন. দশ তারিখের সাওমের ক্ষেত্রে চন্দ্র গণনায় ত্রুটি হয়ে ভুলে পতিত হবার আশংকা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে। হতে পারে গণনায় নয় তারিখ কিন্তু বাস্তবে তা দশ তারিখ।
এর মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী তাৎপর্য হচ্ছে,আহলে কিতাবের বিরোধিতা করা। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদীসে আহলে কিতাবদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, আশুরা প্রসঙ্গে বলেছেন,لَئِنْ عِشْتُ إلَى قَابِلٍ لاَصُومَنَّ التَّاسِعَ“আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখসাওমরাখব”।
আল্লামা ইবন হাজার রহ. لئن بقيت إلى قابل لأصومن التاسع “আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই নয় তারিখসাওমরাখব।”
হাদীসের ব্যাখ্যা-টিকায় বলেছেন,নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নয় তারিখেসাওমরাখার সংকল্প ব্যক্ত করার উদ্দেশ্য কিন্তু এই নয় যে, তিনি কেবল নয় তারিখে সাওম রাখার সংকল্প করেছেন বরং তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে,দশ তারিখের সাওমের সাথে নয় তারিখের সাওমকে সংযুক্ত করা। সাবধানতা বশতঃ কিংবা ইয়াহূদী খ্রিষ্টানদের বিরোধিতার জন্য। এটিই অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মত। সহীহ মুসলিমের কতিপয় বর্ণনা এদিকেই ইঙ্গিত করে। শুধু দশ তারিখসাওমরাখার বিধান
শাইখুল ইসলাম বলেন,আশুরারসাওমএক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা আর আশুরার একটিমাত্রসাওমমাকরূহ হবে না।
ইবন হাজার হায়সামী রচিত তুহফাতুল মুহতাজ গ্রন্থে আছে,আশুরা উপলক্ষে দশ তারিখ কেবল একটিসাওমরাখাতে কোনো দোষ নেই।
নির্ধারিত দিনটি শনি কিংবা জুমু‘আ বার হলেও আশুরারসাওমরাখা হবে
কেবলমাত্র জুমু‘আর দিনকে নফল সাওমর জন্য নির্ধারণ করা মাকরূহ,অনুরূপভাবে ফরযসাওমব্যতীত শনিবারসাওমরাখতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে নিম্নের যে কোনো পদ্ধতির অনুকূলে রাখা হলে আর মাকরূহ হবে না। যেমন, ঐ দুই দিনের সাথে মিলিয়ে আরো একদিন করে সাওমরাখা। দিনটি অনুমোদিত অভ্যাসের অনুকূলে পড়ে যাওয়া যেমন একদিনসাওমরাখা একদিন ইফতার করা। মান্নত কিংবা ক্বাযারসাওমহওয়া। অথবা শরী‘আতসাওমরাখতে উৎসাহিত করেছে এমন তারিখে ঐ দিনদ্বয় পড়ে যাওয়া, যেমন আরাফা কিংবা আশুরার দিন...।
আল্লামা বাহুতি রহ. বলেন,শুধুমাত্র শনিবারকেসাওমরাখার জন্য নির্ধারণ করা মাকরূহ। কারণ, এ প্রসঙ্গে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تَصُومُوا يَوْمَ السَّبْتِ إلّا فِيمَا اُفْتُرِضَ عَلَيْكُمْ»
“ফরযসাওমব্যতীত তোমরা কেবল শনিবারসাওমরাখবে না”।
তাছাড়া শনিবারকে ইয়াহূদীরা খুব সম্মান করে,অনেক বড় করে দেখে,তাই সেদিনসাওমরাখলে তাদের তাশাব্বুহ তথা সাদৃশ্যাবলম্বন হয়ে যাবে...। তবে শুক্র বা শনিবার যদি কোনো ব্যক্তির অনুস্মৃত অভ্যাসের আওতায় পড়ে যায় তাহলে আর মাকরূহ হবে না। যেমন, এক ব্যক্তি নিয়মিত আরাফা ও আশুরারসাওমপালন করে আর সেই আরাফা কিংবা আশুরার দিন শনি কিংবা শুক্রবার দিন সংঘটিত হল তাহলে সে ব্যক্তির জন্য উক্ত শুক্র কিংবা শনিবারসাওমরাখা মাকরূহ হবে না। কেননা এসব ক্ষেত্রে অভ্যাসকে বিবেচনায় রাখা হয়...।
মাসের শুরু অস্পষ্ট হয়ে গেলে করণীয় কি?
ইমাম আহমদ রহ. বলেন,মাসের শুরু নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে কিংবা সেটি অস্পষ্ট হয়ে গেলে সে মাসে আশুরারসাওমতিনদিন রাখা হবে। আর এমনটি করা হবে কেবল নয় ও দশ তারিখের সাওমকে নিশ্চিত করার জন্য।
সুতরাং যে ব্যক্তি মুহররম মাসের আগমণ সম্বন্ধে বুঝতে পারেনি এবং সে দশ তারিখের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে ইচ্ছুক তাহলে সে নিয়মমত যিলহজকে ত্রিশ দিন গণনা করবে। অতঃপর নয় ও দশ তারিখসাওমরাখবে। আর যে ব্যক্তি নয় তারিখের ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন করতে চাইবে সে আট,নয় ও দশ তারিখ মোট তিন দিনসাওমরাখবে। (এখন যদি যিলহজ মাস নাকেস অর্থাৎ ত্রিশ দিন থেকে কম হয় তাহলে সে নিশ্চিত তাসু‘আ ও আশুরারসাওমরাখতে সক্ষম হবে) তবে এখানে মনে রাখা দরকার, আশুরারসাওমকিন্তু মুস্তাহাব, ফরয নয়। তাই লোকদেরকে রমযান ও শাওয়াল মাসের মত মুহররম মাসের চাঁদ তালাশ করার নির্দেশ দেওয়া হবে না।
আশুরারসাওমকোন ধরনের পাপের জন্য কাফ্ফারা?
ইমাম নাওয়াবী রহ. বলেন,আশুরারসাওমসকল সগীরা গুনাহের কাফ্ফারা। অর্থাৎ এ সাওমের কারণে মহান আল্লাহ কবীরা নয় বরং (পূর্ববর্তী একবছরের) যাবতীয় সগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
এর পর তিনি বলেন,আরাফারসাওমদুই বছরের (গুনাহের জন্য) কাফ্ফারা, আশুরারসাওমএক বছরের জন্য কাফ্ফারা,যার আমীন ফিরিশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে... হাদীসে বর্ণিত এসব গুনাহ মাফের অর্থ হচ্ছে, ব্যক্তির আমলনামায় যদি সগিরা গুনাহ থেকে থাকে তাহলে এসব আমল তার গুনাহের কাফ্ফারা হবে অর্থাৎ আল্লাহ তার সগীরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর যদি সগীরা-কবীরা কোনো গুনাহই না থাকে তাহলে এসব আমলের কারণে তাকে সাওয়াব দান করা হবে,তার দরজাত বুলন্দ করা হবে। আর আমলনামায় যদি শুধু কবীরা গুনাহ থাকে সগীরা নয় তাহলে আমরা আশা করতে পারি, এসব আমলের কারণে তার কবীরা গুনাহসমূহ হালকা করা হবে।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন,পবিত্রতা অর্জন, সালাত, রমযান, আরাফা ও আশুরারসাওমইত্যাদি কেবল সগীরা গুনাহসমূহের কাফ্ফারা অর্থাৎ এসব আমলের কারণে কেবল সগীরা গুনাহ ক্ষমা করা হয়। রোজার সাওয়াব দেখে প্রতারিত হওয়া চলবে না
‘আরাফা কিংবা ‘আশুরার সাওমের ওপর নির্ভর করে অনেক বিভ্রান্ত লোক ধোঁকায় পড়ে যায়। আত্মপ্রতারিত হয়। এমনকি অনেককে বলতে শোনা যায়, আশুরার সাওমর কারণে পূর্ণ এক বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে গিয়েছে। বাকি থাকল ‘আরাফার সাওম,তো সেটি সাওয়াবের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন, এ আত্ম প্রবঞ্চিত-বিভ্রান্ত লোকটি বুঝল না যে, রমযানেরসাওমও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ‘আরাফা ও ‘আশুরার সাওমর চেয়ে বহু গুণে বড় ও অধিক সাওয়াবযোগ্য ইবাদত। আর এগুলো মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের জন্য কাফ্ফারা তখনই হয় যদি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। সুতরাং এক রমযান থেকে পরবর্তী রমযান এবং এক জুমু‘আ থেকে পরবর্তী জুমু‘আ,মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপের জন্য কাফ্ফারা তখনই হবে যখন কবিরা গুনাহ ত্যাগ করা হবে। উভয়বিধ কার্য সম্পাদনের মাধ্যমেই কেবল সগীরা গুনাহ মাফ হবে। আবার কিছু বিভ্রান্ত লোক আছে, যারা ধারণা করে,তাদের নেক আমল বদ আমল থেকে বেশি। কারণ, তারা গুনাহের ভিত্তিতে নিজেদের হিসাব নেয় না এবং পাপাচার গণনায় আনে না। যদি কখনো কোনো নেক আমল সম্পাদন করে তখন কেবল তাই সংরক্ষণ করে। এরা সেসব লোকদের ন্যায় যারা মুখে মুখে ইস্তেগফার করে অথবা দিনে একশত বার তাসবিহ পাঠ করে অতঃপর মুসলিমদের গীবত ও সম্মান বিনষ্টের কাজে লেগে যায়। সারা দিন আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কাজে অতিবাহিত করে। এসব লোক তাসবীহ তাহলীলেরফযীলতসম্বন্ধে খুব ফিকির করে। কিন্তু তার মাধ্যমে সংঘটিত অন্যায় ও পাপকর্মের প্রতি মোটেই দৃষ্টিপাত করে না। এটিতো কেবলই ধোঁকা ও আত্মপ্রতারণা।
রমযানের ক্বাযা অনাদায়ি থাকা অবস্থায় আশুরার সাওমের হুকুম কী?
রমযানের ক্বাযা আদায় না করে নফলসাওমরাখা যাবে কিনা এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ আছে। হানাফীদের নিকট জায়েয। কেননা রমযানের ক্বাযাসম্পন্ন করা তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াজিব নয়। বিলম্বে সম্পন্ন করার অবকাশ আছে। শাফে‘ঈ ও মালেকিদের নিকটও জায়েয তবে মাকরূহ হবে। কারণ, এতে ওয়াজিব আদায় বিলম্বিত হয়।
আল্লামা দুসূকি রহ. বলেন, মান্নত, ক্বাযাও কাফ্ফারা জাতীয় ওয়াজিবসাওমঅনাদায়ি রেখে নফলসাওমপালন করা মাকরূহ। সে নফল সাওমটি গাইরে মুআক্কাদাহ হোক কিংবা মুআক্কাদাহ যেমন আশুরা,যিলহজের নয় তারিখেরসাওমইত্যাদি।
হাম্বলী ইমামগণের মতে রমযানের ক্বাযাআদায় করার পূর্বে নফলসাওমপালন করা হারাম। এমতাবস্থায় কেউ নফলসাওমরাখলে সহীহ হবে না এমনকি পরবর্তীতে ক্বাযাআদায় করার মত পর্যাপ্ত সময় থাকলেও বরং আগে ফরয আদায় করতে হবে।
সুতরাং প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে, রমযানের পরপরই বিলম্ব না করে ক্বাযাসম্পন্ন করে নেওয়া। যাতে কোনোরূপ সমস্যা ছাড়াই আরাফা ও আশুরারসাওমপালনের সুযোগ পাওয়া যায়। কেউ যদি আরাফা ও আশুরার সাওমেরক্বাযা আদায়ের নিয়ত করে এবং এ নিয়ত রাত্র হতেই করে তাহলে সেটি তার জন্য যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ তার ক্বাযা আদায় হয়ে যাবে। আল্লাহর করুণা অনেক বিশাল।
‘আশুরায় উদযাপিত কিছু বিদ‘আত
‘আশুরার দিন লোকেরা সুরমা লাগানো, গোসল করা, মেহেদি লাগানো,মুসাফাহা করা,খিচুড়ি রান্না করা, আনন্দ উৎসবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে থাকে এ সম্বন্ধে শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. কে প্রশ্ন করা হলো, এর কোনো ভিত্তি আছে কি না?
জবাবে তিনি বললেন,এসব অনুষ্ঠানাদি উদযাপন প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ কোনো হাদীস বর্ণিত হয় নি এবং সাহাবীগণ থেকেও না। চার ইমামসহ নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমও এসব কাজকে সমর্থন করেননি। কোনো মুহাদ্দিস এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ও সাহাবীগণ থেকে কোনো সহীহ কিংবা দুর্বল হাদীসও বর্ণনা করেননি। তাবে‘ঈদের থেকেও কোনো আছর পাওয়া যায়নি। পরবর্তী যুগে কেউ কেউ কিছু বানোয়াট ও জাল হাদীস বর্ণনা করেছে যেমন,“যে ব্যক্তি আশুরার দিন সুরমা লাগাবে সে ব্যক্তি সে বছর থেকে চক্ষুপ্রদাহ রোগে আক্রান্ত হবে না।”“যে ব্যক্তি আশুরার দিন গোসল করবে সে সেই বছর থেকে আর রোগাক্রান্ত হবে না।” এরূপ অনেক হাদীস। এরই ধারাবাহিকতায় তারা একটি মওদু‘ হাদীস বর্ণনা করেছে। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালল্লামের প্রতি মিথ্যারোপ ব্যতীত আর কিছুই নয়। হাদীসটি হচ্ছে,
«أَنَّهُ مَنْ وَسَّعَ عَلَى أَهْلِهِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ سَائِرَ السَّنَةِ»
“যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজ পরিবারের ওপর উদার হাতে খরচ করবে আল্লাহ তা‘আলা সারা বছরের জন্য তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।” এ ধরণের সবগুলো বর্ণনা মিথ্যা ও জাল। অতঃপর শাইখ উল্লেখ করেছেন, যার সার সংক্ষেপ হচ্ছে-এ উম্মতের অগ্রজদের ওপর যখন সর্বপ্রথম ফিতনা আপতিত হলো ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত সঙ্ঘটিত হলো। এর কারণে বিভিন্ন দলের লোকেরা কী করল?তিনি বলেন,
তারা যালেম ও জাহেলদের দলে রাপান্তরিত হলো। হয়ত মুনাফিক বে-দীন নয়ত বিভ্রান্ত বিপথগামী। তারা বন্ধুত্ব ও আহলে বাইতের বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে লাগল। আশুরার দিনকে রোলবিল, কান্নাকাটি ও শোক দিবস হিসাবে গ্রহণ করল। তাতে তারা বুক ও চেহারা চাপড়ানো, আস্তিন ছেড়াসহ জাহেলি যুগের বিভিন্ন প্রথা প্রকাশ করতে লাগল। বিভিন্ন শোকগাথা যার অধিকাংশই বানোয়াট ও মিথ্যায় পরিপূর্ণ ও গীত আবৃত্তি করতে লাগল। এর ভেতর সত্যের কিছুই নেই আছে শুধু স্বজনপ্রীতি ও মনোকষ্টের নবায়ন। মুসলিমদের পরস্পরে যুদ্ধ ও দুশমনি সৃষ্টির পায়তারা। পূর্ববর্তী পূন্যাত্মা সাহাবীগণকে গালমন্দ করার উপাদান। মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের অনিষ্ট ও ক্ষতির পরিসংখ্যান কেউ লিখে শেষ করতে পারবে না। তাদের মোকাবেলা করেছে হয়ত আহলে বাইত ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত নাসেবি সম্প্রদায় অথবা একদল জাহেল সম্প্রদায়। যারা ফাসেদের মোকাবেলা করেছে ফাসেদ দিয়ে। মিথ্যার মোকাবেলা মিথ্যার মাধ্যমে, খারাপের জবাব দিয়েছে খারাপ দিয়ে এবং বিদ‘আতের জবাব দিয়েছে বিদ‘আতের মাধ্যমে। ইবনুল হা-জ্জ রহ. বলেন, আশুরার বিদ‘আতের আরো একটি হচ্ছে, তাতে যাকাত আদায় করা। বিলম্বিত কিংবা অগ্রীম। মুরগি জবাইর জন্য একে নির্ধারণ করা। নারীদের মেহেদি ব্যবহার করা। আল্লাহ তা‘আলা আশুরাসহ যাবতীয় কর্মে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহর আদর্শের পূর্ণ অনুবর্তনের তাওফীক দান করুন। আমিন। সমাপ্ত
|
|